তোমার রব এত দেবেন, তুমি খুশি হয়ে যাবে
২১ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০২ এএম | আপডেট: ২১ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০২ এএম
মহান আল্লাহ তা’আলা তাঁর রাসুলকে বার বার এ সুসংবাদ দিয়েছেন যে, তোমাকে এত বেশী দেয়া হবে যে, তুমি খুশি হয়ে যাবে। এই দেয়া কোন সম্পদ বা ধন-দৌলতের কথা বলা হয়নি। আল্লাহ তা’আলা বলেন, “আর শীঘ্্রই তোমার রব তোমাকে এত দেবেন যে, তুমি খুশি হয়ে যাবে।”(সুরা দোহা:৫) মুফাসসিরিনগণ আল্লাহর এই ওয়াদাটির ব্যাখ্যা করেছেন যে,এটি নবী সা: এর শাসন ক্ষমতা অর্থাৎ তিনি যেই মিশন নিয়ে দুনিয়ায় এসেছিলেন সেই মিশনের সফলতার কথা। যেই মিশনকে তিনি দুনিয়ার সকলকিছু থেকে অধিক ভালবাসতেন। সে মিশনটি সম্পর্কে আল্লাহ তা’আলা বলেন,“তিনিই সেই সত্তা যিনি তাঁর রাসুলকে হিদায়াত এবং দীনে হক দিয়ে পাঠিয়েছেন যাতে তিনি এ দীনকে অন্য সকল দীনের ওপর বিজয়ী করেন, চাই তা মুশরিকদের কাছে যতই অসহনীয় হোক না কেন।”(সুরা সফ:৯) এটিই ছিল রাসুলুল্লাহ সা: এর প্রকৃত মিশন।
যারা আল্লাহর দাসত্বের সাথে অন্যদের দাসত্বও করে থাকে এবং আল্লাহর দীনের সাথে অন্য সব দীন ও বিধানকে সংমিশ্রিত করে, শুধু এক আল্লাহর আনুগত্য ও হিদায়াতের ওপর গোটা জীবন ব্যবস্থা কায়েম হোক তারা তা চায় না। যারা ইচ্ছামত যে কোন প্রভু ও উপাস্যের দাসত্ব করতে সংকল্পবদ্ধ এবং যে কোন দর্শন ও মতবাদের ওপর নিজেদের নিজেদের আকিদা-বিশ^াস, নৈতিকতা এবং তাহযীব-তমুদ্দুনের ভিত্তিস্থাপন করতে প্রস্তুত এমনসব লোকের বিরোধীতার মধ্যেও বলা হচ্ছে যে, তাদের সাথে আপোষ করার জন্য রাসুলকে পাঠানো হয়নি। বরং তাকে পাঠানো হয়েছে এ জন্য যে, তিনি আল্লাহর পক্ষ থেকে যে হিদায়াত ও জীবনব্যবস্থা এনেছেন তাকে গোটা জীবনের সব দিক ও বিভাগের ওপর বিজয়ী করে দিবেন। অবস্থা যাই হোক না কেন, তাকে এ কাজ করতেই হবে। কাফের-মুশরিকরা তা মেনে নিক আর না নিক এবং এ বিরোধীতায় সর্বশক্তি নিয়োগ করলেও সর্বাবস্থায় রাসুলের এ মিশন সফলকাম হবে এবং পূর্ণতা লাভ করবে।
এই মিশন বাস্তবায়ন করতে গিয়ে তাঁকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের সম্মুখীন হতে হয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে বিভিন্ন মিথ্যা কুৎসা রটনা করা হেেয়ছে। তাই আল্লাহ বিভিন্ন সময় তাঁকে শান্তনা দিয়েছেন। আল্লাহ তা’আলা বলেন, “কাজেই হে মুহাম্মদ! এরা যেসব কথা বলে তাতে সবর করো এবং নিজের রবের প্রশংসা ও গুণকীর্তন সহকারে তাঁর পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করো সুর্য উদয়ের আগে ও তার অস্ত যাবার আগে আর রাত্রিকালেও প্রশংসা ও মহিমা ঘোষণা করো এবং দিনের প্রান্তগুলোতেও। হয়তো এতে তুমি সন্তুষ্ট হয়ে যাবে।”(সুরা তাহা:১৩০) সুরা মুযাম্মিলে বলা হয়েছে,“ এরা যা বলে তাতে ধৈর্যধারণ করো।”(আয়াত ১০) যেহেতু মহান আল্লাহ এখনই তাদেরকে ধ্বংস করতে চান না এবং তাদের জন্য একটি অবকাশ সময় নির্ধারিত করে ফেলেছেন, তাই তাঁর প্রদত্ত এ অবকাশ সময়ে তারা রাসুলের সাথে যে ধরণের আচরণই করুক না কেন আল্লাহ তা’আলা তাঁর রাসুল সা: কে সহ্য করার হুকুম দিচ্ছেন এবং সবরের সাথে তাদের যাবতীয় তিক্ত ও কড়া কথা শুনেও যাতে নিজের সত্যবাণী প্রচার ও স্মরণ করিয়ে দেবার দায়িত্ব পালন করে যেতে থাকেন। সালাত থেকে এ সবর, সহিষ্ণুতা ও সংযমের শক্তি লাভ করা যায়।
এই ওয়াদাটি রাসুলুল্লাহ সা: এর জীবনেই পুর্ণ হয়েছে। সমগ্র আরব ভুখ-, দক্ষিণের সমুদ্র উপকুল থেকে উত্তওে রোম সা¤্রাজ্যের সিরীয় ও পারস্য সা¤্রাজ্যের ইরাকী সীমান্ত এবং পূর্বে পারস্য উপসাগর থেকে নিয়ে পশ্চিম লোহিত সাগর পর্যন্ত এলাকা তাঁর শাসনাধীন চলে আসে। আরবের ইতিহাসে এই প্রথমবার এই সমগ্র ভূখ-টি একটি আইন ও শাসন ব্যবস্থার আওতাধীন হয়। যে শক্তিই এর সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়, সে চুর্ণ-বিচুর্ণ হয়ে যায়। লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ-এর কালেমায় সমগ্র দেশ গুঞ্জরিত হয়ে উঠে। যে দেশে মুশরিক ও আহলি কিতাবরা নিজেদের মিথ্যা মতবাদ ও আদর্শকে বিজয়ী হিসাবে প্রতিষ্ঠিত রাখার জন্য প্রাণান্তকর প্রচেষ্টা চালিয়ে ছিল সেখানে মানুষ কেবল আনুগত্যের শিরই নত করেনি বরং তাদের মনও বিজিত হয়ে যায় এবং তাদের বিশ^াস, নৈতিক চরিত্র ও কর্মকা-ে বিরাট বিপ্লব সাধিত হয়।
“আর লোকেরা যা বলে বেড়াচ্ছে সে বিষয়ে ধৈর্যধারণ করো।“(সুরা মুযাম্মেল:১০) এর একটি অর্থ হচ্ছে, তুমি নিজের বর্তমান অবস্থায় সন্তুষ্ট থাকো। এই অবস্থায় নিজের কর্তব্য পালনের কারণে তোমাকে নানা অপ্রীতিকর কথা শুনতে হচ্ছে। তোমার প্রতি যারা অন্যায় বাড়াবড়ি ও জুলুম করছে তাদেরকে এখনি শাস্তি দেয়া হবে না, তারা সত্যের আহবায়ককে কষ্ট দিতেও থাকবে এবং পৃথিবীর বুকে বুক ফুলিয়ে চলবে, আল্লাহর এই ফয়সালায় তুমি সন্তুষ্ট হয়ে যাও। দ্বিতীয় অর্থ হচ্ছে, তুমি তুমি একবার একাজটি করে দেখো। এর এমন ফলাফল সামনে এসে যাবে যাতে তোমার হৃদয় উৎফুল্ল হয়ে উঠবে। এই দ্বিতীয় অর্থটি কুরআনের বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্নভাবে বর্ণিত হয়েছে। যেমন সুরা বনী ইসরাঈল সালাতের হুকুম দেয়ার পর বলা হয়েছে:“আশা করা যায়, তোমর রব তোমাকে ‘মাকামে মাহমুদ’ (প্রশংসিত স্থানে ) পৌঁছে দিবেন।”(আয়াত:৭৯) অন্য সুরায় বলা হয়েছে:“ তোমার পরবর্তি যুগ অবশ্যি পুর্ববর্তী যুগের চাইতে ভালো। আর শিগগির তোমার রব তোমাকে এতবেশী দিবেন যার ফলে তুমি খুশি হয়ে যাবে।”(সুরা দুহা:৪-৫)
জাহেলিয়াতের গভীর পংকিলতায় নিমজ্জিত একটি জাতি মাত্র তেইশ বছরের মধ্যে এমনভাবে বদলে যায় যে, সমগ্র মানব জাতির ইতিহাসে এর কোন নজীর নেই। এরপর নবী সা: যে আন্দোলনের বীজ বপন করে গিয়েছিলেন তা বিপুল শক্তিমত্তা সহকারে জেগে ওঠে এবং এশিয়া ইউরোপ ও আফ্্িরকা তিন মহাদেশের বিরাট অংশে ছেয়ে যায়। দুনিয়ার প্রত্যন্ত অঞ্চলে তার প্রভাব ছড়িয়ে পড়ে। এসব মহান আল্লাহ তাঁর রাসুলকে দিয়েছেন দুনিয়ায়। আর আখিরাতে তাঁকে যা কিছু দিবেন তার বিপুলতা ও মহত্বের কল্পনাই করা যাবে না।
“আর শীঘ্্রই তোমার রব তোমাকে এত দেবেন যে, তুমি খুশি হয়ে যাবে।”(সুরা দোহা:৫) অর্থাৎ তোমার ওপর তোমার রবের দান ও মেহেরবানী এমনভাবে বর্ষিত হবে যাতে তুমি খুশি হয়ে যাবে। মহান আল্লাহ নবী সা: কে এ সুখবরটি এমন সময় দেন যখন মুষ্টিমেয় কয়েকজন লোক ছিল তাঁর সহযোগী এবং অন্যদিকে সমগ্র জাতি ছিল তাঁর বিরোধী। বাহ্যত সাফল্যের কোন দুরবর্তী চিহ্ন দেখা যাচ্ছিল না। ইসলামের প্রদীপ মক্কাতে টিম টিম করে জ¦লছিল। চতুরদিকে ঝড় উঠেছিল তাকে নিভিয়ে দেবার জন্য। সে সময় আল্লাহ তাঁর নবীকে বলেন: প্রাথমিক প্রাথমিক যুগের সংকটে তুমি মোটেই পেরেশান হয়ো না। তোমার জন্য পরবর্তী প্রত্যেকটি যুগ পূর্ববর্তি যুগের চেয়ে ভালো প্রমাণিত হবে। তোমার শক্তি, সম্মান, প্রতিপত্তি ও মর্যাদা দিনের পর দিন বাড়তে থাকবে। তোমার প্রভাব ও অনুপ্রবেশের সীমানা বিস্তৃত হতেই থাকবে। আবার এই ওয়াদা কেবল দুনিয়া পর্যন্ত সীমাবদ্ধ ছিল নয়। এর মধ্যে এ ওয়াদাও আছে যে, আখেরাতে তুমি যে মর্যাদা লাভ করবে তা দুনিয়ায় তোমার অর্জিত মর্যাদা থেকে অনেক বেশী হবে। “হে নবী! আমি তোমাকে সুস্পষ্ট বিজয় দান করেছি।”(সুরা ফাতহ:১) এটি মূলত: হুদাইবিয়ার সন্ধির পর মু’মিনদের সুসংবাদ শুনানো হয়। কিন্তু এতে প্রাথমিকভাবে সাহাবায়ে কেরাম বিস্মিত হলো এই ভেবে যে, এ সন্ধিকে বিজয় বলা যায়? ঈমানের ভিত্তিতে আল্লাহর নির্দেশ মেনে ভিন্ন কথা। কিন্তু তাকে বিজয় বলাটা কারোরই বোধগম্য হচ্ছিল না। বিভিন্ন স্হাবায়ে কেরামের প্রশ্নের উত্তরে রাসুলুল্লাহ সা: দৃঢ়ভাবে ও প্রত্যয়ের সাথে বলেন অবশ্যই এটি সুস্পষ্ট বিজয়। কিছদিন যেতে না যেতেই এ সন্ধি যে প্রকৃতই বিজয় প্রকাশ পেতে থাকে। এবং সবশ্রেনীর মানুসের কাছে একথা পুরোপুরি স্পষ্ট হয়ে গেলো যে, প্রকৃতপক্ষে হুদাইবিয়ার সন্ধি থেকেই ইসলামের বিজয় সূচনা হয়েছিল। পরবর্তিতে মক্কা বিজয়ের মাধ্যমে এ কথা আরো সুস্পষ্ট হয়ে উঠে যে, হুদাইবয়ার সন্ধিই হলো মক্কা বিজয়ের রাজতোরণ।
পনেরশত বছর যাবত সালাতের আযানে, ইকামাতে তাঁর নাম উচ্চরিত হচ্ছে। সালাতের প্রতিটি তাশাহুদে তাঁর ওপর দরুদ ও সালাম পেশ করা হচ্ছে। সালাতের বাইরেও পৃথিবীর প্রতিটি কর্ণারে প্রত্যকটি মুসসমান নরনারী দরুদ ও সালাম পেশ করছেন। তাঁর নাম উচ্চরিত হওয়ার সাথে সাথে প্রতিটি মুসলিমকে তাঁর ওপর দরুদ ও সালাম পেশ করা ওয়াযিব করে দেয়া হয়েছে।
লেখক: গবেষক, কলামিস্ট, চিন্তাবীদ।
বিভাগ : ধর্ম দর্শন
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
শেরপুরে সেনা সদস্যকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় ৩৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা : গ্রেপ্তার-৭
ঢাকায় তিন দিনব্যাপী ইরানি চলচ্চিত্র উৎসব শুরু
খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করলেন পাকিস্তানের হাইকমিশনার
ফিলিস্তিনে ইসরাইলের বর্বর হামলার প্রতিবাদে ঢাকায় আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত
বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের বিরুদ্ধে অবস্থাকারীরাই মনিপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের দায়িত্বে
ভিভো ভি৪০ ফাইভজি, হালকা ওজনে শক্তিশালী ব্যাটারি
ভারতের শাসকগোষ্ঠী ও হিন্দুত্ববাদী শক্তি সম্প্রীতি চায় না: তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা
দিল্লী দিশেহারা হয়ে নানা ধরনের বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে: শাহীন শওকত
বাংলাদেশে ব্রিটিশ নাগরিকদের ভ্রমণে সতর্কতা জারি
সামরিক আইন জারি দক্ষিণ কোরিয়ায়
হাইকমিশনে হামলার প্রতিবাদে উত্তরায় মশাল মিছিল
নকলায় ট্রাক চাপায় নাতি পরপারে শিশু নানী হাসপাতালে
ইফায় ১৫ বছরের দুর্নীতির শ্বেতপত্র প্রকাশের সিদ্ধান্ত
ভারতের সঙ্গে পূর্ববর্তী ফ্যাসিবাদী সরকারের করা সব গোপন চুক্তি প্রকাশ করা উচিত : হাসনাত আবদুল্লাহ
ওয়ার্ল্ড রোবট অলিম্পিয়াডে বাংলাদেশের ২ পদক
ছাত্র-জনতার বিপ্লবে ভারতের স্বপ্ন ভেস্তে গেছে : হাজী ইয়াছিন
ভারত বাংলাদেশের ওপর যুদ্ধ বাধানোর চক্রান্ত করছে বিক্ষোভ সমাবেশে নেতৃবৃন্দ
পার্থিব ও ওহীর জ্ঞানের সমন্বয়ে গঠিত মাদরাসা শিক্ষা: অধ্যক্ষ শাব্বীর আহমদ মোমতাজী
চাঁদপুরে কিশোরচালক মহিন হত্যা মামলার ৩ আসামী আটক
২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে আরও ৭ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ৬২৯ জন